ক্যাপ্টেন বুমরাহ নিজের নিয়ম তৈরি করে ভারতের প্রাণ ফেরালেন
ক্যাপ্টেন বুমরাহ নিজের নিয়ম তৈরি করে ভারতের প্রাণ ফেরালেন
পার্থ টেস্টের প্রথম দিনে গড়ে পেসাররা মাত্র ০.৮ ডিগ্রি সিম পেয়েছিলেন, কিন্তু বুমরাহ শুধু সেখানেই থেমে থাকেননি, বল হাতে আরও বেশি কিছু করে দেখালেন।শুরুটা এক অন্যরকম পরিবেশে
ডিজেরিডু নামের বাঁশি, যা গাছের ডাল বা গুঁড়ি ফাঁপা করে বানানো হয়, একটি গভীর, মর্মস্পর্শী শব্দ তৈরি করে। এটি অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের কাছে শুধু একটি বাদ্যযন্ত্র নয়, বরং এক অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে সংযোগের প্রতীক। পার্থ স্টেডিয়ামের সকালে মনে হচ্ছিল, এই সুর যেন প্রকৃতির আত্মার সাথে তাল মেলাচ্ছে।এমন সময় ইয়াশস্বী জয়সওয়াল মাঠের এক পাশে নিজের মতো অনুশীলনে ব্যস্ত। থ্রোডাউন নিতে নিতে হয়তো জাতীয় সঙ্গীতের সময় না হলে আরও কিছুক্ষণ চালিয়ে যেতেন।
ম্যাচের আগে বুমরাহ বলেছিলেন, "এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে পারফর্ম করলে তোমার ক্রিকেটের মান বাড়বে।" বোলিং কোচ মরনে মর্কেল যোগ করলেন, "এটা সেই মঞ্চ যেখানে নিজের নাম তৈরি করতে হয়। এখানে ভালো ক্রিকেট খেলো, ৫০০-৬০০ রান করো, ২০ উইকেট নাও, আর নিজের জায়গা করে নাও।"
পিচে শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা
কেএল রাহুল ব্যাটিং ওপেনিংয়ের দায়িত্বকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে নিলেও, প্রথম আধাঘণ্টা ধরে মাঠ পরিষ্কার করতে ব্যস্ত ছিলেন। ক্রিজে নিজের জায়গা চিহ্নিত করা, মাটি ঠেলে ঘাস ঠিকঠাক করা—সবকিছু যেন তাকে খেলার সাথে গভীর সংযোগে রেখেছিল।পার্থ স্টেডিয়ামে যদি কেউ সেই "জোনে" না থাকতে পারে, তবে সে যেন মাঠেই নেই।
বুমরাহর জাদু
ইনিংস পরিবর্তনের পরেই বুমরাহ মাঠে নেমে ঝড় তুললেন। ১৫০ রানের লক্ষ্য নিয়ে প্রতিপক্ষকে বশে আনার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। তার বোলিংয়ের গতি আর নিখুঁত লাইন-লেংথ পুরো পরিবেশকে বদলে দিয়েছিল। প্রথম ১২ বলেই চারটি উইকেটের সুযোগ তৈরি করেন। নাথান ম্যাক্সউইনি তার সিমিং ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন।মার্নাস লাবুশানের মতো ব্যাটারও তার সেরা স্কোরিং ফর্ম হারিয়েছিলেন। বুমরাহর প্রতিটি ডেলিভারি যেন পিচের দৈর্ঘ্য বদলে দিচ্ছিল। দর্শকদের ভিড়—৩১,৩০২ জন—ক্যাপ্টেন বুমরাহর প্রতিটি ডেলিভারির জন্য অপেক্ষা করছিল।
তারপর ভারতীয় ব্যাটিং
লাঞ্চ পর্যন্ত ভারতের স্কোর ছিল ৫১/৪ এবং এরপর ৭৩/৬। যদিও এমন স্কোর ভালো দেখায় না, তবে প্রতিপক্ষের বলবাজির তীব্রতায় ব্যাটাররা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল।ভারতীয় পেসাররাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করল সমান তালে। তারা গড়ে ০.৮ ডিগ্রি সিম পেয়েছে, কিন্তু হর্ষিত রানা তার প্রথম ম্যাচেই ১.৩৬ ডিগ্রি সিম বের করে ট্র্যাভিস হেডকে বোল্ড করলেন। তার অসাধারণ ডেবিউ পুরো দলের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে দিল।
ম্যাচের আগের রাতেই রানাকে জানানো হয়েছিল যে তিনি খেলবেন। এই চাপের মধ্যেও তিনি এবং নিথিশ কুমার রেড্ডি নিজেদের স্বাভাবিক রেখেছিলেন।
একটি সাহসী নির্বাচন
ভারতীয় দল একটি গভীর ব্যাটিং ও বোলিং কম্বিনেশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। একদিকে অভিষেক করা অলরাউন্ডাররা, অন্যদিকে অভিজ্ঞ বোলারদের মিলিত প্রচেষ্টা। আর ছিলেন সেই একজন—ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত নাম—জাসপ্রিত বুমরাহ।এটি কেবল একটি ম্যাচ নয়; এটি ভারতীয় ক্রিকেটের আত্মা এবং সাহসের গল্প।
No comments