২৬/১১-এর ১৬ বছর: মুম্বাই সন্ত্রাসী হামলার বীরদের স্মরণ
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর, বুধবার শুরু হয়ে
২৯ নভেম্বর, শনিবার পর্যন্ত চলা মুম্বাইয়ের সমন্বিত সন্ত্রাসী হামলাগুলি সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় তোলে। তাজ হোটেল, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট হোটেল, ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস, লিওপোল্ড ক্যাফে, মুম্বাই চাবাড হাউস (নারিমান হাউস), কামা হাসপাতাল এবং মেট্রো সিনেমায় লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গিরা এই নৃশংস হামলা চালায়।
১০ জন লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গি পাকিস্তান থেকে সমুদ্রপথে মুম্বাই এসে এই হামলা চালায়। এই ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ১৬৬ জন প্রাণ হারায়, যার মধ্যে ২০ জন নিরাপত্তা কর্মী এবং ২৬ জন বিদেশি নাগরিক। এছাড়া, আহত হন ৩০০
জনেরও বেশি।আজ, ২৬/১১-এর ১৬তম বার্ষিকীতে, রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং সাধারণ জনগণ সকলেই তাদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন সেসব নিরীহ মানুষকে, যারা সেদিন প্রাণ হারিয়েছিলেন। সেই ভয়াবহ ঘটনার যন্ত্রণা আজও বহমান, তবে আমাদের উচিত সেই বীরদের শ্রদ্ধা জানানো, যারা শতাধিক জীবন বাঁচাতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ
করেছিলেন।তুকারাম ওম্বলে
মুম্বাই পুলিশের সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর তুকারাম ওম্বলে, যিনি এই হামলার সময় অকুতোভয় সাহসিকতার পরিচয় দেন। ২৬ নভেম্বর রাতে, তিনি নিরস্ত্র অবস্থায় সন্ত্রাসী আজমল কাসাবকে আটকানোর চেষ্টা করেন। গিরগাঁও চৌপাট্টিতে কাসাবকে থামানোর সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। কিন্তু তার সাহসিকতায় কাসাবকে জীবিত ধরা সম্ভব হয়। কাসাবের রাইফেলের দখল নেওয়ার সময় ওম্বলে প্রাণ হারান।
মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন
মেজর সন্দীপ উন্নিকৃষ্ণন ২৬/১১ হামলার সময় তাজ হোটেলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় শহীদ হন। তিনি NSG কমান্ডোদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার অভিযানে ছিলেন। তার সাহসিকতার জন্য তাকে ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি অশোক চক্র প্রদান করা হয়।
হেমন্ত কারকরে
অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াডের প্রধান হেমন্ত কারকরে, ১৯৮২ ব্যাচের আইপিএস অফিসার, কামা হাসপাতালের কাছে এক সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ হন। তার সঙ্গে আইপিএস অফিসার অশোক কামটে এবং এনকাউন্টার বিশেষজ্ঞ বিজয় সালাসকারও প্রাণ হারান। তাজ হোটেলে জঙ্গি অভিযানে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তার বুকে তিনটি গুলি লাগে।
মল্লিকা জাগাদ
২৬/১১ হামলার সময় তাজ প্যালেস হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট ম্যানেজার মল্লিকা জাগাদ অতিথিদের সুরক্ষিত রাখতে দ্রুত ব্যবস্থা নেন। তিনি দরজা বন্ধ করেন, আলো নিভিয়ে দেন এবং অতিথিদের শান্ত থাকতে বলেন। বিস্ফোরণ এবং ধোঁয়া সত্ত্বেও, মল্লিকা তার ধৈর্য ধরে রেখেছিলেন এবং অতিথিদের সান্ত্বনা দিয়ে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছিলেন।
করমবীর সিং কান্গ
২৬/১১ হামলার সময় তাজ হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার করমবীর সিং কান্গ তার স্ত্রী ও সন্তানদের হারান। তবে এই বিপর্যয়ের মাঝেও তিনি হোটেল কর্মী এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করতে অদম্য মনোবল প্রদর্শন করেন। হামলা শুরু হলে তিনি হোটেলে উপস্থিত ছিলেন না, তবে দ্রুত ফিরে এসে উদ্ধারকাজে যোগ দেন এবং শতাধিক মানুষকে রক্ষা করেন।
২৬/১১ মুম্বাই হামলার বীরদের এই সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগ আমাদের চিরকাল অনুপ্রেরণা জোগাবে।
No comments